মঙ্গলবার প্রকাশ্যে এল সেই ভয়ংকর ষড়যন্ত্রের চিত্রনাট্য। ষড়যন্ত্রে জড়িত তিনজন ধরা পড়েছে। ধৃত প্রহ্লাদ সর্দার, প্রতাপ সর্দার ও পুষ্পেন্দু বেরার মধ্যে প্রহ্লাদ এবং প্রতাপ দুই ভাই। তাদের জেরা করে জানা গিয়েছে, এই ঘটনার পিছনে রয়েছে ঠাকুর পছন্দ না হওয়া নিয়ে ক্রেতা- বিক্রেতার ঝামেলা। ধৃতরা সেই কথা কবুলও করেছে। ঘটনার সূত্রপাত রবিবার রাতে ডায়মন্ডহারবারের রামনগর থানা এলাকার নুরপুর পঞ্চায়েতের মুকন্দপুর গ্রামে। এখানেই ঠাকুর তৈরির কর্মশালা রয়েছে প্রহ্লাদদের। দুর্গাপ্রতিমার পর অর্ডার নিয়ে কালীপ্রতিমাও তৈরি করেন প্রহ্লাদরা। সোমবার কালীপুজো ছিল। রবিবার রাতে পুজো কমিটির লোকজন ঠাকুর নিতে আসেন। তখনই গন্ডগোল হয়। প্রহ্লাদরা স্বীকার করেছেন, কমিটির বরাতমতো প্রতিমা গড়তে পারেননি তাঁরা। তাই কমিটির লোকজন ঠাকুর নিতে অস্বীকার করে। অশান্তি তৈরি করে সহানুভূতি আদায়ের জন্য তারপর প্রহ্লাদরা নিজেরাই ‘অবিক্রিত’ বেশ কিছু প্রতিমা ভেঙে ফেলেন। রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে ভাঙচুরের সেই খবর একটিরাজনৈতিক দলের তরফে জেলাজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। যার জেরে সাময়িক উত্তেজনাও তৈরি হয়। রাস্তা অবরোধের মতো ঘটনাও ঘটে। পুলিশের অবশ্য প্রথম থেকেই সন্দেহ ছিল। তদন্তে নেমে চক্রান্তের চিত্রনাট্য খুঁজে পান তদন্তকারীরা। জানা যায়, এই ঘটনার নেপথ্যে ধর্মীয় বা সম্প্রদায়গত বিরোধের কোনও বিষয় আদৌ নেই। এর পিছনে রয়েছে বরাত অনুযায়ী প্রতিমা তৈরি করতে না পারার সমস্যা। ঠাকুর পছন্দ না হওয়ায় মৃৎশিল্পী বনাম পূজো কমিটির বচসা। ষড়যন্ত্রের জাল এতটাই গভীরে ডালপালা ছড়িয়েছিল। যে, প্রতিমা ভাঙার প্রায় একডজন ছবি এবং ‘প্রেস রিলিজ’ এর ধাঁচে মনগড়া একটি লেখাও গেরুয়া শিবিরের পক্ষ থেকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। উদ্দেশ্য ছিল, কালীপুজোর আগে সাম্প্রদায়িক প্ররোচনা দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলা। গোটা ঘটনার পিছনে গেরুয়াবাহিনী তথা আরএসএস-এর হাত রয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তাদের পর্যবেক্ষণ, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে তৃণমূল সরকারের বদনাম করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতেই এই ঘৃণ্য চক্রান্তের জাল বোনা হয়েছিল। পুলিশের তৎপরতায় অবশ্য ষড়যন্ত্রের সেই জাল ছিন্ন করা গিয়েছে।