খাটুন্দী’ গ্রামের ভট্টাচার্য পরিবারের সাত বাড়ির দুর্গাপূজা।
কাটোয়া মহকুমার কেতুগ্রাম এক নম্বর ব্লকের অন্তর্গত ‘খাটুন্দী’ গ্রামের ভট্টাচার্য পরিবারের সাত বাড়ির দুর্গাপূজা ৬৫০ বছরেরও বেশী প্রাচীন।এখানকার দুর্গা পুজোর মূল আকর্ষণ হলো একই উঠানের মধ্যে পাশাপাশি পরপর ছয়টি মন্দিরে দুর্গা প্রতিমার পুজো হয়।একই সঙ্গে ও আলাদা আলাদা ভাবে।সাত নম্বর দুর্গা পূজাটি হয় দুর্গা মায়ের একটি ছবির সামনে ঘট পূজার মাধ্যমে পাশেরই একটি আলাদা উঠানের মন্দিরে।
আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছরেরও বেশি আগে শ্রীচৈতন্য দেবের দীক্ষা গুরু কেশব ভারতী এই দুর্গা পুজোর প্রতিষ্ঠা করেন ‘খাটুন্দী’ গ্রামে।প্রথমদিকে এখানে একটি দুর্গা প্রতিমাতেই ভট্টাচার্য পরিবারের পুজো শুরু হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে এই ভট্টাচার্য পরিবারের মধ্যে দুর্গাপুজো নিয়ে নানান মতবিরোধের জেরে তিনটি আলাদা আলাদা পুজোতে ভাগ হয়ে যায়। তারপর সময়ের সঙ্গে পারিবারিক ভাগাভাগির জেরে পুজোগুলিও ভাগাভাগি হয়ে শেষ পর্যন্ত দাঁড়ায় সাতটি আলাদা আলাদা দুর্গা পুজোতে। একটি ছাড়া বাকি ছয়টির প্রতিটি পুজোর কাঠামোতেই একই ধরনের সাত পুতুলের দুর্গা প্রতিমা গড়া হয় প্রতিবছর।কালের নিয়মে পরিবার বড় হওয়ায় পুজো ভাগ হয়ে গেলেও ভট্টাচার্য বাড়ির দুর্গা পুজোয় পারস্পরিক সম্প্রতির কোনোও অভাব নেই এখানে। বর্তমানে প্রত্যেকে সবাই মিলেমিশেই আয়োজন করেন তাঁদের পারিবারিক দুর্গাপুজো।
ভট্টাচার্য বাড়ির পুজোয় বৈষ্ণব ও শাক্ত মতের অদ্ভুত সহাবস্থান দেখা যায়। এখানে পাঁচটি দুর্গা পুজোতে ছাগ বলির প্রথা রয়েছে। আর একটি পূজা হয় সম্পূর্ণ বৈষ্ণব মতে।
এখানকার পূজা মণ্ডপের পাশেই রয়েছে কৃষ্ণ রাইরের মন্দির ও একটি শিব মন্দির। দুর্গা পুজোর সময় পারিবারিক পুরানো প্রথা অনুযায়ী প্রথমে কৃষ্ণ রাইকে ভোগ নিবেদন করার পর তবেই মা দুর্গাকে ভোগ নিবেদন করা যায়।
দশমীতে ঠাকুর বিসর্জনের সময় কৃষ্ণ রাইরের মন্দিরের সামনে পাশাপাশি ছয়টি প্রতিমাকে রেখে আরতি করা হয়। তারপরই প্রতিমা গুলিকে পুকুরে দিকে নিয়ে যাওয়া হয় বিসর্জনের উদ্দেশ্যে।
তাই বর্তমানে এখনো পর্যন্ত বছরের পর বছর ধরে বংশ পরম্পরায় খুব নিষ্ঠা ও মহাধুমধামের সাথে পারিবারিক সাত বাড়ির দুর্গাপুজোর ঐতিহ্য বহন করে চলেছেন ‘খাটুন্দী’ গ্রামের ভট্টাচার্য বাড়ি।