বীরভূমের নানুরের সুজাতা বেগম তার পরিবারের সংসারের হাল ধরতে সর্বত্রই তার টোটো গাড়ি নিয়ে ছুটে চলেছেন নানান প্রান্তে।এক সময় ওই সুজাতা বেগম শখ করে তার স্বামীর কাছে টোটো চালানো শিখেছিলেন। কিন্তু সে কি আদৌও জানতো সেই শখই একদিন হয়ে উঠবে পেশা। বছর আটত্রিশের সুজাতার নানুরের চিঁড়েকল সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে তার অভাবের সংসার।টোটো চালিয়েই ৩ছেলে মেয়ের পড়াশোনা সহ সংসার চালাচ্ছেন তিনি।বছরের পর বছর ঘুরলেও ঘোরেনি সুজাতার সংসারের চাকা তাই বাধ্য হয়েই তার স্বামীর পেশায় হাল ধরেছেন তিনি। বছর দুয়েক আগে সুজাতার স্বামী শেখ ইসমাইল সাইকেল থেকে গর্তে পড়ে গিয়ে ডান পা ভেঙে যায়। তারপর নার্সিংহোমে চিকিৎসা করিয়েও শেখ ইসমাইলের ডান পা পুরোপুরি ঠিক হয়ে ওঠেনি। আর সেই পা নিয়ে কোন রকমে চলা ফেরা করতে পারলেও ডাক্তার চাপের কাজ করতে বারণ করে।
জানা যায় তারপরেই হতাশ হয়ে পড়েন সুজাতা,সেগ ইসমাইল পরিবারের একমাত্র রোজগেরে থাকলেও তার যৎসামান্য সঞ্চয় যা ছিল তা সবই চিকিৎসায় খরচ হয়ে গিয়েছে।এ চিন্তা নিয়েই ছেলে মেয়েদের মুখে দুবেলা দুমুঠো ভাত ও পড়াশোনার খরচ কি ভাবে যোগান দেবেন তা ভেবেই অসহায় হয়ে পড়েন সুজাতার পরিবার।আর শেষমেষ সুজাতা সিদ্ধান্ত নেন টোটো চালানোর।তবে তিনি একজন মহিলা হয়ে টোটো চালিয়ে কি ভাবে সংসার চালাতে পারবেন সুজাতা? এলাকাবাসীরা সে প্রশ্নই ছুড়ে দিয়েছিল তাকে। বর্তমানে এখন সেই সুজাতাই নানুরের বুকে তিনি নিজেই এক মহিলা টোটো চালক হয়ে পুরুষ দের থেকে তিনি ঝড়ের গতিতে বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে চলেছেন। এই টোটো চালিয়েই দৈনিক ৫০০ টাকা আয় করে পাঁচ সদস্যের সংসারের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তিনি।
পাড়া প্রতিবেশী দের কাছে তিনি ঘুরে দাঁড়াতেই যোদ্ধার সম্মান পেয়েছেন। এলাকাবাসীরা জানান, তার এই টোটো চালিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পে মুগ্ধ হয়েছি আমরাও। তিনি একজন সংখ্যালঘু পরিবারের বউ হয়েও যে তার সংসার চালাতে তিনি এই টোটো চালানো ধরবেন কেই বা জানতো।
সুজাতার এই লড়াইয়ের মোকাবিলার জন্য লাভপুরের ঠিবা গ্ৰামে ইক্সুইড্রাইভার সিটি নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আয়োজিত সাম্য মেলার অনুষ্ঠান মঞ্চে সংবর্ধনাও জানানো হয়।
জীবন জীবিকার লড়াই চালিয়ে সুজাতা তার মতো আরও বাকি পাঁচটা মেয়েকেও ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

nineteen + sixteen =