প্রতি বছর বর্ষা এলেই তিস্তায় উঠে আসে সুস্বাদু বোরোলি মাছ শীতের আগ পর্যন্ত ভালো মাত্রায় দেখা মেলে তাদের। উত্তরবঙ্গের অন্যতম জনপ্রিয় মাছ এই বোরোলি। মূলত তিন থেকে চার মাস এই মাছের পরিমাণ বেশি থাকে তিস্তায়।তবে,বর্ষা এলেই বেড়ে যায় বোরোলি মাছের আগমন। উত্তরবঙ্গবাসী তো বটেই, পাশাপাশি এখানে ঘুরতে আসা বাঙালি পর্যটকেরাও এই মাছের স্বাদে মুগ্ধ। তাই এই ভরা বর্ষায় এখানে ঘুরতে এলেই বোরলি মাছ চেখে দেখেন না এমন কেউ নেই। এ কারণেই প্রত্যেকবছর তিস্তার বোরলি মাছের চাহিদা থাকে তুঙ্গে।

এবছর জুন থেকেই বর্ষা প্রবেশ হয়েছে উত্তরবঙ্গে। তবে নাগাড়ে বৃষ্টির কারণে এবং পাহাড় থেকে নেমে আসা জলরাশির কারণে তিস্তার জল ঘোলা, কমেছে বোরলীর সংখ্যা। মাছের সংখ্যা কমলেও চাহিদা তুঙ্গে। স্বভাবতই আকাশ ছোঁয়া বোরোলি মাছের দাম।উত্তরবঙ্গের রুপালি শস্য, বোরোলি মাছ যে প্রায় ছয় ইঞ্চিও লম্বা হতে পারে তা ধারণা ছিল না অনেকেরই। তাই এবছর বাজারে প্রথম কদিন মাছ কেনার হিড়িক দেখা যায়নি ক্রেতাদের মধ্যে। অনেকেই ভেবেছিলেন এগুলো বোধহয় অন্য মাছ বোরোলি মত দেখতে।

তিস্তা-করলার মোহনায় মাছ ধরতে আসা হারান দাস জানালেন, গতবছরের সিকিমের বন্যায় ঘোলা জলে বিষক্রিয়ায় আর পলিতে চাপা পরে তিস্তায় সব মাছ মরে গিয়েছিল। অনেকে ভেবেছিলো আর হয়তো কোনদিন তিস্তায় বোরোলি মাছ পাওয়া যাবে না। এবার বর্ষা প্রায় এক মাস আগে শুরু হয়েছে তিস্তার জল সমানে বাড়ছে গত একমাস। এখন জল কিছুটা কমতেই আবার আমাদের জালে ধরা পড়লো বড়োলি। তবে এখন পাহাড়ে সমানে বৃষ্টির ফলে জল ঘোলা হওয়ার কারণে বোরোলির পেটটা হলুদ, জল পরিষ্কার হলে রুপালি বোরোলির পেটটা সাদা হয়ে যাবে, তবে সেটা পূজার পর।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ,পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী,প্রয়াত জ্যোতি বসুর উত্তরবঙ্গে এলেই তার বোরোলি প্রিয়তার কথা ফলাও করে নিউজ পেপারে ছাপা হতো। তা তিনি, জলদাপাড়ার হলঙে আসুন বা কালীঝোড়ার পিডব্লিউডি বাঙলোতে। সেই থেকে কুলীন বোরোলি, উত্তরবঙ্গেই তিস্তা, তোর্সা ইত্যাদি যে অল্প কটা নদীতে পাওয়া যায় ,তার পার্শ্ববর্তী শহরের বাজারগুলোতে তিন-চার ইঞ্চি মাপের গুলোই কেজি প্রতি দাম হাজার টাকার এপার ওপার। তাও একদম ফ্রেশ বোরোলি পাবার সম্ভাবনা কম বিষপ্রয়োগ বা ইলেকট্রিক শক আর বরফে সংরক্ষণের ফলে।

প্রবল বর্ষায় তিস্তার জল বাড়ায় জলপাইগুড়ির তিস্তা পাড়ের জুবিলী পার্ক থেকে বাঁধ ধরে প্রায় আট কিলোমিটার। আগেও দেখা গেছে তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা কিন্তু নদীতে জল বাড়লে খুশিই হয়। তার কারণ মাছ আর ভেসে আসা গাছের সংখ্যা বেড়ে যায়।আর এবার তো টেমাই আর নানাধরনের জাল নিয়ে স্থানীয়রা রীতিমতো মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠেছে। কিছু জেলের কাছে তো প্রায় ছয় ইঞ্চি সাইজেরও বোরোলি দেখা গেল। ওনারা বললেন, যে বোরোলি যত বড়, চর্বির আধিক্যের জন্য তার পেটের রঙ তত হলুদ। ভাজা, পাতলা ঝোল আর সরষে বোরোলি তো অসাধারণ।

জেলেদের কাছ থেকে নিতে হলে যেতে হবে সকাল দশটা বা বিকেল চারটার মধ্যে। তারপর সব বোরোলি চলে যাবে আড়তদারদের কাছে। খুব বড় সাইজেরগুলো আটশ টাকা কেজি পাবেন, যেগুলো বাজারে বারোশো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

twelve + 7 =