যে দেশের জন্য তাদের স্বামীরা প্রাণপাত করল সেই দেশের জন-প্রতিনিধিরাই আজ দেশের সঠিক মূল্য দেয় না।
স্বাধীনতার ৭৫ বছর অতিক্রান্ত। দেশ-জুড়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তত্ত্বাবধানে স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালন হচ্ছে। কিন্তু স্বাধীনতার ৭৫ বছর অতিক্রান্ত হলেও দেশ এখনো ধর্মান্ধতা এবং দুর্নীতির বেড়া জালে আবদ্ধ হয়ে রয়েছে। যে উদ্দেশ্য নিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন দেশের জন্য তা আজকের ভারতবর্ষে অনেকাংশের নীতি সম্পূর্ণ হয়নি বলে দাবি করলেন মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের দুই খ্যাতনামা স্বাধীনতা সংগ্রামী বিষ্ণুব্রত ভট্টাচার্য এবং শ্রীসুন্দর ভট্টাচার্যের দুই ৯০ বছরের স্ত্রী নমিতা ভট্টাচার্য এবং গীতা ভট্টাচার্য। স্বাধীনতা খুব কাছ থেকেই দেখেছেন তারা দুজনে। কিন্তু এতদিন পরে এসে তাদের একটাই আক্ষেপ তাদের স্বামীরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন দেশের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে তারা অত্যন্ত লজ্জিত।সাংবাদিকদের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় উঠে আসলো তাদের স্বাধীনতার সঙ্গে স্বামীদের সম্পর্কে নানা তথ্য। স্বাধীনতা সংগ্রামী বিষ্ণুব্রত ভট্টাচার্য এবং শ্রী সুন্দর ভট্টাচার্য দুজনেই সম্পর্কে খুঁড়ততো ভাই। অন্যদিকে দুজনেই দেশিকোত্তম বিধুশেখর শাস্ত্রীর ভাতুষ্পুত্র। দুজনেই ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে আড়াই বছর জেল খেটেছেন। এই দুই স্বাধীনতার সংগ্রামের স্ত্রীরা, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উৎসবের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে তারা সত্যিই লজ্জিত যে এই ভেবে যে দেশের জন্য তাদের স্বামীরা প্রাণপাত করল সেই দেশের জন-প্রতিনিধিরাই আজ দেশের সঠিক মূল্য দেয় না।
কথা প্রসঙ্গে বিষ্ণুব্রত ভট্টাচার্যর স্ত্রী নমিতা ভট্টাচার্য জানালেন ২১ বছর বয়সে তিনি হরিশ্চন্দ্রপুরে বিয়ে হয়ে এসেছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামী স্বামী বিষ্ণুব্রত ভট্টাচার্যকে তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন। হরিশ্চন্দ্রপুর সহ জেলার উন্নয়নে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের পর অন্যতম ভূমিকা নিয়েছিলেন। কলকাতা সহ বেশ কয়েকটি স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। হেডমাস্টার অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সভাপতি ছিলেন। বহুবার ভোটে লড়েছেন। জেলার শিক্ষার উন্নয়নে তার অনেক অবদান রয়েছে। কিন্তু দেশের ও রাজ্যের স্বাধীনতার পরবর্তী অবস্থা দেখে খুব দুঃখ হয়। রাজ্যের যে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে তার স্বামী সারা জীবন স্বাধীনতার পর থেকে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। সেই রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী দুর্নীতিগ্রস্ত। প্রশাসনের রন্ধে রন্ধে দুর্নীতি। যা সত্যি লজ্জাকর।
অন্যদিকে আরেক স্বাধীনতার সংগ্রামী শ্রী সুন্দর ভট্টাচার্যের স্ত্রী গীতা ভট্টাচার্য জানালেন তার বাপের বাড়ি ছিল বাংলাদেশে। ১৫ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর আসেন। দেশ তখন সবে স্বাধীন হয়েছে। স্বামী ছিলেন গান্ধীবাদী স্বাধীনতার সংগ্রামী।স্বামী স্ত্রী সুন্দর ভট্টাচার্য কে দেখতে গ্রামের নিম্নবর্গীয় লোকেদের জন্য বিভিন্ন রকম কর্মসূচি নিতে। এমনকি তাদের বাড়ির উঠোনে সপ্তাহে একদিন করে কাজের লোকেদের সঙ্গে এক আসনে বসে মধ্যাহ্ন ভোজন সারতেন। গান্ধীজীর অস্পৃশ্যতা বিরোধী আন্দোলন তাকে ভীষণ ভাবে নাড়া দিয়েছিল। সেই জন্য হরিশ্চন্দ্রপুর থানার সামনে কালী মন্দিরে গ্রামের হরিজন সম্প্রদায় কে দিয়ে কালীর ভোগ রান্না করিয়ে ছিলেন। সেই পরম্পরা আজও চলে আসছে। স্বাধীনতা আন্দোলনের পর দেশ স্বাধীন হলে তিনি রেলের চাকরি পেয়েছিলেন। সে সময় স্বাধীনতা আন্দোলনকারীদের সরকার বিভিন্ন রকম সুযোগ-সুবিধা দিত। কিন্তু রেলে যোগদান করার পর তিনি স্বাধীনতার সংগ্রামীদের সমস্ত সুযোগ সুবিধা সরকারকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। স্ত্রীকে জানিয়েছিলেন দেশের স্বাধীনতা আনার বিনিময় কোন অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা তিনি চান না। কিন্তু আজ দেশ ধর্মান্ধতার বেড়াজালে আবদ্ধ। বিভিন্ন ধর্মে হানাহানি। স্বাধীন দেশ এরকম হোক চাননি তাদের স্বামীরা।