শাসকদলের ব্লক সভাপতিদের তালিকা প্রকাশ্যে আসতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় “বিধায়করা দলের মালিক এবং নিজেদেরকে চাকর” বলে ক্ষোভ প্রকাশ দলের অঞ্চল সভাপতির,
ব্লক সভাপতিদের তালিকা ঘোষণা নিয়ে ফের প্রকাশ্যে শাসকদলের গোষ্ঠী কোন্দল। অঞ্চল সভাপতি ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন এলাকার বিধায়কের বিরুদ্ধে। যদিও অভিযোগ না মেনে পাল্টা সাফাই দিয়েছেন বিধায়ক। এই মুহূর্তে জল কোন দিকে গড়ায় সেই দিকেই তাকিয়ে সকলে। সারা-রাজ্যের সঙ্গে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকেও তৃণমূলের মাদার কমিটির সহ অন্যান্য শাখা সংগঠনের ব্লক সভাপতিদের তালিকা প্রকাশ হয়েছে। আর এই তালিকা প্রকাশ হতেই দেখা গিয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক কে বিধানসভা ভিত্তিক দুই ভাগে ভেঙ্গে দিয়ে মাদার কমিটি সহ অন্যান্য সংগঠনের দুই জন করে ব্লক সভাপতি মনোনয়ন করা হয়েছে। আর এর জেরেই শুরু হয়েছে তৃণমূলের ভেতরে প্রবল গোষ্ঠী কোন্দল। হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের চাঁচল বিধানসভার অন্তর্গত চারটি অঞ্চলকে নিয়ে একজন ব্লক সভাপতি অন্যদিকে হরিশ্চন্দ্রপুরের ১ নম্বর ব্লকের বাকি তিনটি অঞ্চলকে নিয়ে আরেক জন ব্লক সভাপতি নির্বাচন করা হয়েছে। তালিকা প্রকাশ হতেই তুলসিহাটা তৃণমূল কংগ্রেসের অঞ্চল সভাপতি মনোজ রাম সোশ্যাল মিডিয়ায় নাম না করে দলের বিধায়ক এবং নেতৃত্বের বিরুদ্ধে পোস্ট করেছেন। “হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক তৃণমূলকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হলো কেন?” এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায় মনোজ রাম। আর এই ঘটনা সামনে আসতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে হরিশচন্দ্রপুর থানা এলাকা জুড়ে। মনোজ রাম তার পোস্টে “বিধায়করা দলের মালিক এবং নিজেদেরকে চাকর বলে উল্লেখ করেছেন”। তিনি পোস্টে আরও দাবি করেছেন “হরিশ্চন্দ্রপুর বিধানসভার বহিরাগত কেন চাঁচল বিধানসভার অন্তর্গত চারটি অঞ্চলের ব্লক সভাপতি করা হলো”। তিনি তার পোস্টে আরো উল্লেখ করেছেন “তৃণমূল দলে কে কত বড় চামচা সেটার গ্রহণযোগ্যতা বেশি। দলকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে যাদের হাতে রক্ত ঝরেছে তারাই এখন দলের নেতা” বলে সোশ্যাল মিডিয়াতে তিনি তার ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি দলের কর্মীদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।ঘটনা সামনে আসার পরেই শাসকদলের গোষ্ঠী কোন্দল আবার প্রকাশ্যে এসে পড়লো বলে দাবি শাসক দলের একাংশের নেতা-কর্মীদের।
প্রসঙ্গত দেখা গেছে যে হরিশ্চন্দ্রপুরের ১ নম্বর ব্লকের তিনটি অঞ্চলের জন্য বিধায়ক তজমুল হোসেন ঘনিষ্ঠ মোশাররফ হোসেনকে ব্লক সভাপতি করা হয়েছে অন্যদিকে বাকি চারটি অঞ্চল চাঁচল বিধানসভার অন্তর্গত সেখানে ব্লক সভাপতি করা হয়েছে চাঁচল বিধানসভার বিধায়ক নিহার রঞ্জন ঘনিষ্ঠ পূর্বের ব্লক সভাপতি মানিক দাস কে। তারপর থেকেই শুরু হয়েছে দলের মধ্যে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব। ক্ষোভে ফুঁসছেন দলের একাংশের নেতা-কর্মীরা। ব্লক কে এই ভাবে ভাগ করে দাওয়াতে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসক দলের ভোটে ব্যাপক প্রভাব পড়বে বলে দাবি করছেন দলের নেতারা। এমনকি তুলসিহাটা অঞ্চল সভাপতি দাবি করছেন মুখ খোলার জন্য তাকে বহিষ্কার পর্যন্ত করা হতে পারে। যদিও তাতেও যে তিনি বিদ্রোহ থেকে সরে আসবেন না একথা পরিষ্কার করে দিয়েছেন।
এদিকে তার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ মানতে নারাজ চাঁচল ৪৫ বিধানসভার বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ। তিনি দাবি করেছেন ব্লক কমিটি কি ভাবে নির্বাচিত হবে কারা কারা ব্লক কমিটিতে থাকবে নির্ধারণ হয় রাজ্য কমিটি থেকে। এতে দলের বিধায়ক কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। দলের কোন কর্মী যদি ভাবে এর পিছনে দলের বিধায়কের কোনো ভূমিকা রয়েছে তাহলে সেটা ভিত্তিহীন। যারা এগুলো বলছে তারা বলুক আগে বিধানসভা ভোটে বুথ থেকে কতগুলো ভোট করিয়েছে।
এদিকে শাসকদলের ব্লক সভাপতির গঠনকে ঘিরে তীব্র কটাক্ষ করেছে এলাকার বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপির উত্তর মালদার জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক রুপেশ আগরওয়ালা জানান তৃণমূল দলটা মালিক হচ্ছে মমতা এবং অভিষেক। বাকি সবাই এরা চাকর-বাকর। দলের মধ্যে কোন গণতন্ত্র নেই। দলে একটাই পোস্ট বাকিরা সব ল্যাম্প পোস্ট। দুর্নীতিতে ভরে গিয়েছে শাসক দল। মানুষ সবই বুঝতে পারছে। আস্তে আস্তে এই দলটা গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কবলে পড়ে শেষ হয়ে যাবে।
এদিকে এই প্রসঙ্গে তুলসীহাটা অঞ্চল সভাপতি মনোজ রাম বলেন,” এটা সম্পূর্ণ বিধায়কের সিদ্ধান্তে করা হয়েছে। এইভাবে একটি ব্লককে দুইটি ভাগে ভাগ করার কোন মানে হয় না। হরিশ্চন্দ্রপুর বিধানসভা থেকে সভাপতিদের নিয়ে এসে জোর করে বসানো হয়েছে। প্রত্যেকটা অঞ্চলে নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ হচ্ছে পরবর্তীকালে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ হবে। অনেকে মুখ খুলছে অনেকে খুলতে পারছে না। মুখ খোলার জন্য দল থেকে আমাকে বহিষ্কার করাও হতে পারে।”
এই মুহূর্তে বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত তৃণমূল কংগ্রেস। দলের মহাসচিব এবং বীরভূমের দাপটে জেলা সভাপতি গ্রেপ্তার হয়েছেন। বিরোধীরা বারবার দাবি করছে আরো অনেকে গ্রেপ্তার হবে। তারি মাঝে কলকাতায় অভিষেক ব্যানার্জীর পোস্টার দিয়ে নতুন তৃণমূলের বার্তা।যা নিয়ে ইতিমধ্যে শোরগোল শুরু হয়েছে রাজনীতির অন্দরে। তার মধ্যে নিচু তলায় এই ধরনের ক্ষোভ বিক্ষোভ এবং গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব। স্বাভাবিক ভাবেই অস্বস্তি বাড়াবে শাসকদলের। ক্ষোভ কমাতে এই মুহূর্তে দল কি সিদ্ধান্ত নেয় সেই দিকেই তাকিয়ে সকলে।