পূর্ব মেদিনীপুর আচ্ছা আপনার বাড়ির কাছের তেলেভাজার দোকানে চপ কত করে বিক্রি হয়? কমপক্ষে ৫ টাকা তো বটেই, বেশিও হতে পারে। আর হবে নাই বা কেন? বাজারে কোন জিনিসটার দাম কম আছে বলুন তো। কিন্তু এই অগ্নিমূল্যের বাজারেও ১ টাকায় চপ বিক্রি করছেন এক ব্যক্তি। হ্যাঁ, ঠিকই শুনলেন। মাত্র ১ টাকায় চপ। শুধু চপ নয়। তিন তিনটি আইটেমের চপ, দোপেঁয়াজি ও বেগুনি। স্বাদও অমৃত সমান।

দিন দিন ভোজ্য তেল এবং অন্যান্য সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়ে গিয়েছে চপের দাম। আগে ৩ থেকে ৫ টাকাতেও বড় চপ পাওয়া যেত। তবে এখন সেসব অতীত। এখন বিভিন্ন জায়গায় চপের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ থেকে ১০ টাকা। কোথাও আবার তার থেকেও বেশি। ফলে ইচ্ছে হলে চপ খেতেও এখন দু’বার ভাবতে হয় অনেককেই। তবে অবিশ্বাস্য হলেও পটাশপুরের এক প্রত্যন্ত গ্রামে এই চপ এখনও পাওয়া যায় মাত্র ১ টাকাতেই। আলু, তেল ইত্যাদির মূল্যবৃদ্ধিকে তোয়াক্কা না করে পটাশপুর ও মংলামাড়ো রাজ্য সড়কের পাশে সরিদাসপুর (পাঁচুড়িয়া) বাসস্টপে একচালা গুমটি দোকানে চপ ভাজেন কৃষ্ণগোপাল মাইতি। বছরের পর বছর ধরে মাত্র ১ টাকাতেই চপ বিক্রি করছেন। বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে এখনও ১ টাকায় চপ পাওয়া যায় এই কথা শুনে অনেকেই অবাক হয়ে যান। অবাক হওয়ার পাশাপাশি কৌতুহল বাড়তেই তাঁরা ছুটে যান কৃষ্ণবাবুর দোকানে দোকানের চপ খেতে। কৃষ্ণগোপালবাবুর তেলেভাজার জনপ্রিয়তার কারণে অনেকের কাছে বাসস্টপটি ‘এক টাকার চপের বাসস্ট্যান্ড’ হিসেবে পরিচিত।

মূল্যবৃদ্ধির বাজারে যেখানে সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় সাধারণ মানুষকে। এমনকী, হু হু করে বাড়ছে জিনিসের দাম, সেখানে কী ভাবে মাত্র ১ টাকায় দিনের পর দিন চপ বিক্রি করছেন কৃষ্ণবাবু? এই বিষয়টি অবশ্য খোলসা করে দিয়েছেন তিনি নিজেই। জানিয়েছেন, তাঁর লাভ করাটা লক্ষ্য নয়। তাঁর লক্ষ্য হল মানুষকে খাওয়ানো। তিনি বলেন, “আমাদের এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষ চাষবাসের উপর নির্ভরশীল। কেউ কেউ বাইরে শ্রমিকের কাজ করতে যান। যে কারণে প্রত্যেকেরই আর্থিক অবস্থা সংকটজনক।” তাই এই সকল মানুষের কথা ভেবেই তিনি দীর্ঘ ২২ বছরের বেশি সময় ধরে মাত্র ১ টাকাতেই চপ বিক্রি করছেন।

গোপালসিংপুরে গ্রামের বাড়িতে তাঁর ঠাকুমার তেলেভাজার দোকান ছিল। ঠাকুমার দেখানো পথেই সংসারের হাল ধরতে তেলেভাজা বিক্রি শুরু। ব্যবসায় অভিনব প্রয়োগ, দাম এক টাকায় বেঁধে রাখা।

আগে ছেলে চণ্ডীচরণ পড়াশোনার ফাঁকে বাবার দোকান সামলেতেন। এখন পুরোপুরি বাবার সঙ্গী। সকাল-বিকেল দোকানে ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন পড়ে। একা হাতে সামলান চণ্ডীচরণ। কাঠের আগুনের আঁচে চপ, দোপেঁয়াজি ভাজেন কৃষ্ণগোপালবাবু। তেলেভাজার স্বাদ ও গুণমান বজায় রাখতে নিজের হাতে মশলা ও আলুর পুর তৈরি করেন।

বিয়ে থেকে জামাইষষ্ঠী, এলাকার লোকজন মিষ্টির পরিবর্তে এক টাকার চপ নিয়ে যান। চপ কিনতে ভিড় করেন জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। একটু সময় পেলে বাসযাত্রীরা তেলেভাজা কিনতে নেমে পড়েন। পথচলতি বা অফিস ফেরত লোকজন গাড়ি থামিয়ে চপ কেনেন। কম টাকায় তেলে ভাজা পাওয়ায় রিকশা চালক থেকে ব্যবসায়ী, এখানে সকালের জলখাবার খান।

বছরের পর বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বাজারে মাত্র ১ টাকায় চপ পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই খুশি এলাকার বাসিন্দারা। এলাকার বাসিন্দাদের থেকে জানা গিয়েছে, প্রতিদিন সকাল বেলায় কৃষ্ণবাবুর দোকান খুলে চপ বিক্রি করতে শুরু করার সাথে সাথে ১০টা বাজলেই সব চপ শেষ হয়ে যায়। আবার তিনি বিকাল বেলায় ৪টের পর দোকান খোলেন। তখনও সন্ধে ৭ টার মধ্যেই সব শেষ। শুধু এলাকার বাসিন্দারাই, পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন গ্রাম থেকেও মানুষ কৃষ্ণবাবুর দোকানে চপ কিনতে ছুটে আসেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

eighteen − 5 =