মালদার মানিকচকবাসীর কাছে আজ শ্রেষ্ঠ উৎসবের দিন। কারণ,আজ রক্ষাকালী পুজো।দীর্ঘ প্রায় ৩৫০ বছর ধরে মানিকচকের মথুরাপুর অঞ্চলে এই রক্ষাকালী পুজো একই মতো হয়ে আসছে। পূজা পরিচালন সূত্রে জানাযায়,প্রায় ৩৫০ বছর আগে গোটা মানিকচক জুড়ে কলেরা রোগের মহামারী দেখা দিয়েছিলো।বহু মানুষ একের পর এক প্রাণ হারাচ্ছিলেন।রোগ প্রতিরোধের পথ খুঁজে পাচ্ছিলেন না মানিকচকবাসী।সেসময় মথুরাপুর অঞ্চলের কাহার পাড়াই এক অজ্ঞাত সাধুবাবা বটতলায় ধ্যান করতেন।তখন ওই সাধু এলাকাবাসীকে কলেরা মহামারী থেকে বাঁচতে মা রক্ষার আরোধনার পরামর্শ দেন।তারপর থেকে মথুরাপুরবাসী যৌথ হয়ে মা রক্ষাকালীর পুজো আরম্ভ করে।এলাকাবাসীর বিশ্বাস এই পুজো শুরুর পর থেকে আর এলাকায় কলেরার দেখা পাওয়া যায়নি।সেই থেকে শুরু পুজো যা এখনো একই মতো হয়ে আসছে।পুজো পরিচালন কমিটি আলোচনার মধ্য দিয়ে প্রতিবছর শীতের শুরুতে মায়ের পুজোর আয়োজন করা হয়।বর্তমানে মায়ের স্থাপিত বিশাল মন্দির রয়েছে। তবে এই পুজোয় মায়ের কিছু বিশেষ নিয়ম রীতি রয়েছে।মায়ের প্রতিমার উচ্চতা ৩ ফুট।পুজোর দিন সকালে সূর্যোদয়ের পর মায়ের প্রতিমা বানানোর কাজ শুরু হয় এবং সূর্যাস্তের আগে বানানো শেষ করা হয়।কাঁচা অবস্থাতেই মায়ের পুজো হয়।পুজো শুরুর সময় থেকে মায়ের প্রতিমা বানিয়ে আসছে স্থানীয় বসাক পরিবারের সদস্যরা।বংশ পরম্পরায় বসাক পরিবারের সদস্য জিতেন বসাক বর্তমানে প্রতিমা বানাচ্ছে।তিনি কর্মসূত্রে কলকাতায় সহপরিবার বসবাস করেন।কিন্তু , মায়ের প্রতিমা বানানোর জন্য সমস্ত কাজ ফেলে গ্রামের বাড়ি ফিরে আসে।অর্থের জন্য নয়,মায়ের প্রতি আস্থা নিবেদন করতে।মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে মায়ের পুজো আরম্ভ হয়,যা সারারাত ব্যাপী চলবে এবং ভোরের কাক ডাকার আগেই মায়ের প্রতিমা পাশের ফুলাহার নদীতে নিরঞ্জন করা হয়।পুজোর সারারাত বলি প্রথা চলে।প্রায় প্রতিবছর ১৫০০ বেশি পাঠা বলি হয়।তবে পাঠাবলির বিশেষ নিয়ম রয়েছে, প্রতি মিনিটে ৫ টি বলি হয়।তবে পিছিয়ে নেই মুসলিম সম্প্রদায়।মুসলিম সম্প্রদাযের মানুষ নিজেদের মানোত শোধ করে। মায়ের চরণে দান ও পাঠা দেন,তবে সমস্তটাই গুপ্ত ভাবে।এক রাতের এই পুজোয় সারা মানিকচকবাসী মত্ত থাকেন।মায়ের মন্দিরের পাশে বাগানে বিশাল জাকজমক মেলা বসে।মায়ের দর্শনে প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষ এক রাতে জমায়েত হয় মন্দির চত্বরে।পুজো কমিটির মতে মুসলিম সম্প্রদাযের মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় এই পুজোয় তাই শান্তিপূর্ণ ভাবে পরিচালনা করতে অনেকটা সুবিধে হয়।

পূজা কমিটির এক সদস্য সন্তোষ মন্ডল জানান,’এত বড় পুজোকে শান্তিপূর্ণ সম্পন্ন করতে আমাদের পুলিশ করা নজরদারি থাকছে।মহিলাদের কথা মাথায় রেখে মেলা প্রাঙ্গণে ৪টি পুলিশ ক্যাম্প ও মহিলা পুলিশ পাহারা থাকছে,পৃথক বসার,মায়ের দর্শন ও পুজোর বেবস্থা থাকছে মহিলাদের জন্য।বয়স্ক মানুষদের জন্য মায়ের মন্দিরের পাশে ডিজিট্যাল মাধ্যমে মায়ের দর্শন করতে পারবে। মায়ের প্রচুর অলংকার রয়েছে,যা ভক্তদের দানের।মালদা তথা,প্রতিবেশী রাজ্য বিহার,ঝাড়খন্ড,দিল্লি,মুম্বাই সহ প্রতিবেশী দেশ নেপাল বাংলাদেশ থেকে আজকের এই দিনের মায়ের দর্শনে ভিরজমাই।মায়ের এই এক দিনের মেলা কার্যত মিলনের উৎসে পরিণত হয়’।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

eighteen − eleven =