পেশায় কৃষক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে পড়াশোনা করে এ বছর বাংলায় ৬৬ পেয়ে মাস্টার ডিগ্রিতে প্রথম, বানভাসি হয়ে অর্থনৈতিক সংকটে ছাড়তে হয়েছিল পড়াশোনা এবার তিনি বসতে চলেছেন নেট সেটে

একসময় বানভাসি হয়ে অভাবের সংসারে তিন ভাইয়ের পড়াশোনা ও তিন বোনের বিবাহের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে ছাড়তে হয়েছিল পড়াশোনা, আজ তিনিই ৬৩ বছর বয়সে মাস্টার ডিগ্রিতে ছেষট্টি এ প্রথম হয়ে চমকে দিলেন সকলকে, এখানেই শেষ নয়! চাকরির বয়স নেই তবে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়া শিক্ষক হিসেবে নিজেকে যোগ্য তৈরি করতে তিনি বসতে চান নেট সেটে।

নদীয়ার শান্তিপুর বাগআচরা পঞ্চায়েতের লক্ষীনাথপুর এলাকার বাসিন্ধা বয়স ৬৩ কোটায় হলেও, মাস্টার ডিগ্রির ফলাফলে বাংলা বিভাগে কলেজের সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়ে সকলকে তাক লাগিয়েছেন এই কৃষক ছাত্র। ছোটবেলায় ১৯৭৮ এ যখন সেই কৃষক ছাত্র ১৫ তখন মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার আগেই বন্যায় সবকিছু ওলট-পালট হয়ে যায়। কৃষক পরিবারের ছেলে হওয়ায় বাবার সঙ্গেই সংসারের হাল ধরতে পড়াশোনা ছেড়ে কৃষি কাজে মন দেন।সেই কৃষক ছাত্রর তিন ভাই আর তিন বোন সঙ্গে বাবা-মা তাই এত বড় পরিবারকে চালাতে পড়াশোনা কিংবা বিবাহ কিছুই হয়ে ওঠেনি তার। একে একে ভাই-বোনেদের বিয়ে হয়ে আলাদা সংসার গড়ে দিয়েছেন। বাবা গত হলেও মাকে নিজের কাছেই রেখেছেন অবিবাহিত সেই ছাত্র। তবে পড়াশুনা ছেড়ে দেওয়ার সেই আক্ষেপ ছিল মনে, তাই ভাইয়েদের কমবেশি শিক্ষিত এবং রোজগার নিশ্চিত করিয়ে বোনদের এক এক করে বিয়ে দেওয়ার পর ২০১৬ সালে আবারও ৫৫ বছর বয়সে শান্তিপুর মিউনিসিপাল উচ্চ বিদ্যালয় রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেন সেই কৃষক ছাত্র। ভালো নম্বর পাওয়ায় মায়ের ইচ্ছা অনুসারে আবারো পড়তে থাকেন তিনি তবে সে সময় তিনি সাইকেল সারানোর দোকানে কাজ করতেন অবসর সময়ে পড়াশোনাকেই নিজের সঙ্গী করে নেন তিনি। তারপর, ২০১৮ সালে উচ্চমাধ্যমিক দেওয়ার প্রস্তুতি নিলেও, শান্তিপুরে মুক্ত উচ্চ বিদ্যালয় না থাকায় সমস্যায় পড়েন। বাধ্য হয়ে বীরনগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক দেন। পরবর্তীতে আবারও শান্তিপুর কলেজের নেতাজি ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকেই বাংলা বিভাগে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেনসেই ছাত্র। এরপর মাস্টার ডিগ্রিতে বসেন বছর ৬৩ এই ছাত্র। গত কয়েকদিন আগেই বেরিয়েছে ফলাফল অনলাইনে সেই ফলাফল রীতিমতো তাক লাগিয়েছে সকলকে। দেখা গিয়েছে, ৫২৮ নম্বর অর্থাৎ ৬৬ শতাংশ নম্বর পেয়ে সেরার সেরা হয়েছেন কলেজের প্রায় ২০০ জন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে। পার্ট ওয়ান পার্ট টুর মোট আটটি পেপারে মিলিয়ে বিশ্বনাথ বাবুর নম্বর রীতিমত অবাক করেছে কলেজের শিক্ষক শিক্ষিকাদেরও। তারা জানাচ্ছেন এর আগেও পঞ্চাশের কোটায় অনেকেই স্নাতক হয়েছেন তবে ৬৩ তে মাস্টার ডিগ্রী এই প্রথম।

চাকরি নাই হোক কিন্তু জ্ঞানের আলো সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পরিপূর্ণ শিক্ষক হয়ে ওঠার লক্ষ্যে, আগামী দিনে নেট সেট দিতে চান তিনি। মাতৃভাষা বাংলাকেই তাই নিজের পছন্দের বিষয় করে আজ তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন বয়স কোনভাবেই বাধা হতে পারে না, মনের ইচ্ছা শক্তি থাকলে জয় করা যায় যে কোন লক্ষ্য। আজও তাই কৃষিকাজ সামলে, কলেজে সাইকেল নিয়েই দীর্ঘ কয়েক কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে এসেছিলেন নিজের শংসাপত্র গ্রহণ করতে। জানালেন শিক্ষকদের জন্যই আজ এই সাফল্য।

সেই কৃষক ছাত্র এই লড়াই বিভিন্ন কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়া অনেককেই আবারো নতুন করে অনুপ্রাণিত করবে বলে মনে করছে শান্তিপুর কলেজে অবস্থিত নেতাজি ওপেন ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ। তারা জানাচ্ছেন, শ্রেণীকক্ষের ক্লাস বাধ্যতামূলক না হলেও অনেকে সংশয় প্রকাশ করে থাকেন সার্টিফিকেট সম্পর্কে তবে সারা রাজ্যে রেগুলার পরীক্ষার্থীদের শংসাপত্রের মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ তাদের সার্টিফিকেট শুধু তাই নয়, পরীক্ষাও হয় যথেষ্ট কড়া নিরাপত্তার মধ্যে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

three × three =